বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রবল উত্তেজনার মধ্য দিয়ে ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার নির্বাচন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে প্রথম দফার ১১ই এপ্রিল ২০টি রাজ্যের ৯১টি লোকসভা আসনের জন্য ভোট নেয়া হবে। এসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ১২৮৫ জন প্রার্থী। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ২টি আসনও রয়েছে। একই সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশে বিধানসভার জন্যও ভোট নেয়া হবে। ওড়িশা বিধানসভার ক্ষেত্রে ভোট নেয়া হবে চার দফায়। গত ১০ই মার্চ দেশটির নির্বাচন কমিশন লোকসভা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেছেন। মোট সাত দফায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নির্বাচন শেষ হবে ১৯শে মে। আর ফল প্রকাশ হবে ২৩শে মে। গত এক মাস ধরে শাসক ও বিরোধীদের প্রবল তরজা চলছে। এবারের নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ ভারতীয় জনতা পার্টি এবং কংগ্রেস। এই দু’পক্ষই শরিকদের নিয়ে জোট তৈরি করে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে। কংগ্রেসের নেতৃত্বে সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) বনাম বিজেপির নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চার (এনডিএ) প্রচারে আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে কোনো পক্ষই পিছিয়ে থাকতে রাজি হয়নি।
অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে সরগরম হয়ে উঠেছিল প্রথম দফার প্রচার পর্ব। তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, লোকদল, তৃণমূল কংগ্রেস, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি, তেলেগু দেশম, আম আদমি পার্টির মতো আঞ্চলিক দলগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে। আঞ্চলিক দলগুলো প্রথম থেকে চেষ্টা চালিয়েছে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর লক্ষ্যে একজোট হওয়ার। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় দেশের ২১টি বিরোধী দলকে একসঙ্গে ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার ছাতার তলায় সমবেত করেছিলেন। সেই জোটের প্রতি কংগ্রেসও সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু বিরোধীদের সেই জোট ভোটের ময়দানে অনেকটাই ক্ষতবিক্ষত। আর তাই উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি মহাজোট তৈরি করে লড়াইয়ে নেমেছে। তবে কংগ্রেসকে তারা সঙ্গী করতে রাজি হয়নি। ফলে উত্তর প্রদেশের মতো বৃহৎ রাজ্যে কংগ্রেস একাই লড়াই করছে ভোট ময়দানে। বিরোধী শিবিরের এই ছত্রভঙ্গ অবস্থা আরো অনেক রাজ্যেও।
মঙ্গলবারই প্রথম দফার নির্বাচনের প্রচারাভিযান শেষ হয়েছে। শেষ বেলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার যারা প্রথম ভোট দিচ্ছেন তাদের পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গি শিবিরে ভারতের হানা এবং পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত সেনাদের প্রতি ভোটটি উৎসর্গ করতে বলেছেন। এবারের নির্বাচনে বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ হলো পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসা। এজন্য বিজেপি জাতীয়তাবাদের তাস খেলেছে ভোট প্রচারে।
দেশপ্রেমের জোয়ারে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে জোর প্রচার করেছে। অন্যদিকে কংগ্রেস ও বিরোধী দলগুলো সেনার জীবন নিয়ে রাজনীতি করার প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিরোধীরা মোদি সরকারের আমলের নোটবন্দি, রাফায়েল কেনা নিয়ে দুর্নীতি, কৃষকের আত্মহত্যা নিয়ে সরব হয়েছে। এছাড়াও দেশের সম্প্রীতির পরিবেশ যেভাবে মোদি সরকারের আমলে নষ্ট হয়েছে, ঘৃণার রাজনীতিকে মদত দেয়া হয়েছে এবং বাক স্বাধীনতার ওপর রাশ টানা হয়েছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের সুরক্ষাকেই তুলে ধরেছেন। দেশকে মহাশক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরার দাবি করেছেন। এদিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সবরকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের কর্তাদের নিরপেক্ষতার স্বার্থে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের পুলিশ সুপাকে ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এবার ভোট নেয়া হচ্ছে ইভিএমের মাধ্যমে। প্রতি ইভিএমে প্রার্থীদের ছবি দেয়া থাকছে। থাকছে ‘না’ ভোট দেয়ার ব্যবস্থাও। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই থাকছে ভিভি প্যাডের ব্যবস্থা। ভোট যাতে নির্বিঘ্নে হতে পারে সেজন্য সশস্ত্র বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীকে নিয়োগ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে সাত দফায় মোট ৯০ কোটি ভোটার অংশ নেবেন। এর মধ্যে দেড় কোটি নতুন ভোটার রয়েছেন, যাদের বয়স ১৮-১৯ বছর।
প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গে ভোট হচ্ছে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে। দুই কেন্দ্রেই চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। লড়াইয়ে রয়েছেন বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। এদিকে বিজেপির অভিযোগের ভিত্তিতে ভোটের দু’দিন আগেই অপসারণ করা হয়েছে কোচবিহারের পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তাকে। নতুন পুলিশ সুপারও নিয়োগ করা হয়েছে। অভিষেক গুপ্তার নামে কিছুদিন আগেই কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিল বিজেপি। কোচবিহার রাসমেলা ময়দানে প্রধানমন্ত্রী মোদির সভা থেকে অভিষেক গুপ্তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ জানানো হয়েছিল। অন্যদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ভুটান-ভারত সীমান্ত সিল করে দিতে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের সব নেতা-মন্ত্রীর ওপর নজরদারি চালাতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।